ঠাকুরগাঁওয়ে গত তিন বছরে অন্তত ২০টি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সাময়িকভাবে ওই সব ভাটার কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও পরে তা আবার চালু হয়েছে। এবারও এসব ভাটায় ইট তৈরির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে জেলায় শতাধিক অবৈধ ইটভাটা চলছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া ইট প্রস্তুত নিষিদ্ধ। লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তি ইটভাটা চালু করলে অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় ১১৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫০টি, রানীশংকৈলে ২৫টি, পীরগঞ্জ উপজেলায় ২০টি, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ১৮টি ও হরিপুর উপজেলায় ৬টি ইটভাটা রয়েছে। কোনোটিরই জেলা প্রশাসনের অনুমতি সনদ (লাইসেন্স) নেই। নিষিদ্ধ স্থায়ী চিমনিবিশিষ্ট ভাটা রয়েছে ৭০টি।
পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ে ১২১টি ইটভাটার মধ্যে তিনটির পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে। দুটির নবায়ন নেই।
পরিবেশ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স না থাকলেও চলতি মৌসুমে ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার অন্তত ৫০টি ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ইট পোড়ানো হচ্ছে। অধিকাংশ ভাটার পাশে ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও গাছপালা। কয়েকটির পাশে রয়েছে বিদ্যালয়।
জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, সারা দেশে সব ভাটাই একইভাবে চলে। এটা নতুন কিছু নয়, অবৈধ কিছু না। ভাটামালিকদের ইট পোড়ানোর লাইসেন্স পেতে হলে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করতে হয়। অন্যান্য দপ্তরের অনাপত্তিপত্র পাওয়ার পর অনুমোদন দেওয়া হয়। আইন অমান্য করে যেসব ইটভাটা চলছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে অভিযানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বালিয়াডাঙ্গীর আলোকছিপি এলাকায় মিরাজ ব্রিক্স-১ ও মিরাজ ব্রিক্স-২ নামে সনাতন পদ্ধতির দুটি ইটভাটা স্থাপন করেন বিশ্রামপুর গ্রামের দানেশ আলী নামের এক ব্যক্তি। ভাটা দুটি স্থাপনের পর থেকে ছাই ও কালো ধোঁয়ায় আশপাশের কৃষকের জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ বিষয়ে উপজেলার মহিষমারী গ্রামের রেজওয়ানুল কবীর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ইউএনও কার্যালয়ে ও ২৩ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ভাটা দুটি পরিদর্শন করেন। ১০ মার্চ এক চিঠিতে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমেও দানেশ আলী ভাটায় ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি নেন। রেজওয়ানুল কবীর গত ১৩ অক্টোবর ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক ভাটা দুটি পরিদর্শন করে ইউএনও যোবায়ের হোসেনকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। ইউএনও ৩০ নভেম্বর ভাটা দুটি পরিদর্শন করেন। কিন্তু দানেশ আলী ৪ ডিসেম্বর ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু করেন।
এ বিষয়ে ইউএনও যোবায়ের হোসেন জানান, তিনি ভাটায় ইট পোড়ানোর বিষয়ে কিছু জানেন না।
গত বছর সদর উপজেলার বরুনগাঁও গ্রামে ফাইভ স্টার ব্রিকস নামের একটি জিগজাগ ইটভাটা গড়ে তোলেন এলাকার মো. সামসুজ্জোহাসহ কয়েকজন ব্যক্তি। ১৮ নভেম্বর ওই ইটভাটায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। ভাটাটির ঠিক বিপরীতে কেএসবি নামের আরেকটি ইটভাটা রয়েছে। ভাটাটির পরিবেশ ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স না থাকলেও তা উচ্ছেদ করা হয়নি। কেএসবি ভাটাটিতেও কাঠ ব্যবহার করে ইট পোড়ানোর কাজ চলছে।
জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স না থাকলেও সদর উপজেলার ইয়াকুবপুরে শামা ব্রিকস, আরইউএস ব্রিকস, চৌরঙ্গী এলাকার এসকে ব্রিকস-১, সরদারপাড়া এলাকার এসকে ব্রিকস-২, ঢোলরহাট এলাকার জেএস ব্রিকস, আকচা এলাকার নীড় ব্রিকস, এসএম ব্রিকস, ভেলাজান এলাকার এসএম ব্রিকস, আরাজি ঝাড়গাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে কেএস ব্রিকস, পাহাড়ভাঙ্গা এলাকার জেএম ব্রিকস, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বারোঢালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘিরে কেয়া-১, কেয়া-২, জেপি ব্রিকস, মাধবপুরে কেয়া-৩ প্রভৃতি ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে।
জেলার ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সভাপতি মুরাদ হোসেন বলেন, প্রয়োজনীয় সব কাগজ জমা দেওয়ার পরও পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন থেকে ইট পোড়াতে অনুমোদন সনদ দেওয়া হচ্ছে না। তবে জেলা প্রশাসনের মৌখিক অনুমতি নিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। (সুত্র: প্রথম আলো)