আপেল মাহমুদ, নিজস্ব প্রতিনিধি : এবার ঠাকুরগাঁওয়ে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। মরিচের জন্য বিখ্যাত ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষকের ক্ষেত আর আঙিনাজুড়ে এখন শুধু মরিচ আর মরিচ। অন্যান্য ফসলের তুলনায় মরিচের কিছুটা ভালো দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১৪নং রাজাগাঁওয়ের চাষি মোঃ হেলালুর রহমান(হেলাল) বলেন, ‘ধান আবাদ করে দাম পাই না। সবজি আবাদ করে দাম পাই না। যেটাই আবাদ করতে যাই, খালি লস খাই। সেই দিক থেকে চিন্তা করলে এইবার মরিচের ভালোই দাম পাচ্ছি। শুকনা মরিচ ছয় হাজার টাকা মণ দরে বেচ্ছি।
তবে ক্ষেত থেকে কাঁচা মরিচ বেঁচে দাম পাইনি। গতবার যে মরিচ বেঁচছি আড়াই হাজার টাকা মণ দরে, সেই মরিচ এইবার বেচছি আট শ টেকা মণ।’ একই ধরনের কথা বলেন আসাননগর গ্রামের কৃষক সলেমান আলীসহ কয়েকজন।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের মরিচ সারাদেশে বিখ্যাত। এই মরিচ উৎপাদন হয় ঠাকুরগাঁও সদরের রুহিয়া, রাজাগাঁও, ঢোলারহাট, আখানগর ও রুহিয়া পঞ্চম ইউনিয়নে। জেলায় এবার পাঁচ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ২৩ এপ্রিল রুহিয়া, রাজাগাঁও, ঢোলারহাট, আখানগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের ক্ষেত, বাড়ির উঠান আর আঙিনা এখন পাকা মরিচে উপচে পড়ছে। চলছে মরিচ শুকানোর ধুম।
কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার প্রতি বিঘা(৩৩ শতক) জমিতে গড়ে কাঁচা অবস্থায় ৮০ মণ করে মরিচের ফলন হচ্ছে। শুকানোর পর বিঘাপ্রতি ফলন টিকছে ২০ থেকে ২২ মণ। খেত থেকে তুলেই প্রতি মণ মরিচ ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করে বিঘাপ্রতি কৃষক পাচ্ছেন ৬৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে ২০ মণ শুকনা মরিচ বিক্রি করে পাচ্ছেন ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। অবশ্য এক বিঘা জমির মরিচ শুকাতে মজুরি বাবদ পাঁচ-ছয় হাজার টাকা খরচ হয়।
কৃষকেরা জানান, এবার ক্ষেত থেকে উঠানো পর্যন্ত এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষে খরচ হয়েছে গড়ে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। এক মণ মরিচ ক্ষেত থেকে তোলার জন্য শ্রমিকদের মজুরি দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা। হাটে নিতে পরিবহন বাবদ আরেক দফা খরচ হচ্ছে। সেই হিসাবে ক্ষেত থেকেই যাঁরা পাকা মরিচ বিক্রি করে দিচ্ছেন, তাঁদের খুব একটা লাভ টিকছে না। তবে যাঁরা শুকিয়ে বিক্রি করছেন, তাঁরা ভালো দাম পাচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁও কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, কৃষিবিদ মোঃ আফতাব হোসেন বলেন, জেলায় এবার মরিচের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। এবারও মরিচের ফলন ও দাম দুটোই ভালো পাচ্ছেন কৃষক।